কুরবানির জরুরী মাসআলা-মাসায়েল




যদি কুরবানি না করতে পারেন? কাজা কিভাবে আদায় করতে হয়?

ভূমিকাঃ

কুরবানি একটি মহান ইবাদত। কুরবানি শব্দের অর্থ উৎসর্গ করা। কুরবানি আমাদের জাতি পিতা হযরত ইব্রাহিম (আ) এর সুন্নত। প্রতি বছর মুসলিমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্য ঈদ-উল-আজহার দিনে পশু কুরবানি করে থাকে। হাদীসে আছে কিয়ামতের দিন কুরবানির পশুর রক্ত, চামরা, খুর ইত্যাদি হাজির করা হবে। এগুলো কুরবানি দাতার জন্য নেকি হিসেবে সংরক্ষিত থাকবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে কুরবানি করার তৌফিক দান করুন।


কুরবানি কার উপর ওয়াজিবঃ

➤ মুসলমান হতে হবে। অমুসলিমদের উপর কুরবানি ওয়াজিব না।

➤ বালেগ হতে হবে (প্রাপ্ত বয়স্ক হতে হবে)

নাবালেগের উপর কুরবানি ওয়াজিব নয়।

➤ মুকিম বা নিজ এলাকায় অবস্থানরত হতে হবে। মুসাফিরের উপর কুরবানি ওয়াজিব নয়।

➤ সুস্থ হতে হবে,পাগলের উপর কুরবানি ওয়াজিব না।

➤ নেসাব পরিমান সম্পদের মালিক হতে হবে এর মানে হলো ৭.৫ ভরি স্বর্ন বা ৫২.৫ তোলা রুপা থাকলে বা এর সমমূল্যের অর্থ থাকলে তার উপর কুরবানি ওয়াজিব।

বর্তমান ৭.৫ ভরি স্বর্ণের দাম- ১২,৮৪,৬৪৫ টাকা,

৫২.৫ তোলা রুপার দাম - ১,৪০,৮৮১ টা

কুরবানি করার সময়ঃ

ঈদ-উল আজহার নামাজের পর থেকে ১২ জিলহজ্জ সূর্যাস্ত পর্যন্ত অর্থ্যাৎ ৩ দিন ১০,১১,১২ জিলহজ্জ কুরবানির করতে পারবে।

⏩ কুরবানির পশুর বয়সঃ


🐪 উট - ৫ বছর

🐃 গরু / মহিষ - ২ বছর

🐐 ছাগল /ভেড়া/দুম্বা -১ বছর

অংশীদারঃ

🐪 গরু/উটের ক্ষেত্রে ৭ জন অংশগ্রহণ করতে পারবে।

🐐 ছাগল /ভেড়া/দুম্বা -১ জন।

কুরবানির গোশত বন্টনঃ

কুরবানির গোশত ৩ ভাগে ভাগ করা উত্তম।

তবে কেউ চাইলে সবগুলো নিজেও খেতে পারবে

ক. এক ভাগ আত্মীয় স্বজনদের

খ. এক ভাগ গরিব- মিসকিনদের

গ. এক ভাগ নিজ পরিবারের জন্য

⏩ কুরবানির পশু কেমন হবেঃ


কুরবানির পশু সুস্থ, নির্দোষ, ত্রুটিমুক্ত হতে হবে।

ত্রুটিযুক্ত পশু কুরবানির জন্য অযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবে

✪ অযোগ্য পশু:(যে পশু দিয়ে কুরবানি হবে না)

☞ এক চোখ অন্ধ

☞ খুব দূর্বল বা ল্যাংড়া, কুরবানির স্থান পর্যন্ত হেটে যেতে পারে না।

☞ কান কাটা বা জন্মগতভাবেই অর্ধেক কানের চেয়ে কম।

☞ সব দাঁত পড়ে গেছে

☞ লেজ পুরোপুরি কাটা

☞ শিং পুরোপুরি ভেঙ্গে মস্তিষ্কে আঘাত প্রাপ্ত

☞ বধির কানে শুনে না বা সারা দেয় না

☞ জন্মগতভাবে অঙ্গহানি থাকলে

☞ পাগল বিভ্রান্ত পশু যে নিজের আচরণ নিয়ন্ত্রনে রাখতে পারে নাা

⏩ ঋণ করে কুরবানিঃ


ঋণ করে কুরবানি করা উত্তম নয়। ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির জন্য কুরবানি করা ওয়াজিব নয়। তাকে আগে ঋণ পরিশোধ করার চেষ্টা করতে হবে;তবে কেউ করলে জায়েজ হবে এবং ছওয়াবও পাবে।

কিফয়াতুল মুফতি ৮/৯৭

শরিক নেওয়ার ক্ষেত্রে সর্তকতাঃ

শরীক নেওয়ার ক্ষেত্রে সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে। শরীকের টাকা হালাল হতে হবে। শরীকের মধ্যে কারো মাংস খাওয়ার নিয়ত থাকা যাবে না অন্যথায় সকলের কুরবানি নষ্ট হবে। তাই শরীক নেওয়ার ক্ষেত্রে যাচাই বাছাই করে ধার্মিক লোকদের নিতে হবে যাদের একমাত্র উদ্দেশ্য থাকবে আল্লাহকে রাজি বা খুসি করা।

কুরবানির কিছু জরুরী মাসআলাঃ

১. সুদি ব্যাংকে চাকুরীরত কারো সাথে শরিকে কুরবানি করা জায়েজ হবে কিনা?

উত্তরঃ সুদি ব্যাংক বা ইন্সুইরেন্স কোম্পানিতে চাকুরী করা হারাম। এর বিনিময় যে অর্থ প্রাপ্ত হয় তাও হারাম। এখন যারা এই ধরণের পেশায় নিয়োজিত আছেন তাদের হালাল পেশা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং সে ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত চাকরি করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

অতএব, উক্ত চাকুরির অর্থ দ্বারা যারা কুরবানি করেন তাদের সাথে শরীকে কুরবানি জায়েজ নেই। তবে যদি ব্যাংক ইন্সুইরেন্স ছারাও অর্থ উপার্জনের অন্য হালাল কোন মাধ্যম থাকে তাহলে সেই অর্থ দিয়ে শরিক হলে কুরবানি করতে পারবে।

(ফাতওয়ায়ে শামী-৩/৩২,আহসানুল ফাতওয়া -৭/৫০০)

কুরবানির চামড়া বিষয় মাস'আলাঃ

👉 মালিকের অধিকার:

চামড়া মূলত কুরবানী প্রদানকারী সম্পত্তি নিজে ব্যবহার করতে পারেন বা অন্যকে দানও করতে পারে।

👉 দান করা সুন্নাহ:

চামরা গরিব মিসকিন মাদ্রাসা এতিমখানা বা দান করা উত্তম এতে সওয়াব পাওয়া যায় অনেক সময় এই চামড়া বিক্রি করে প্রতিষ্ঠানগুলো খরচ চালায়।

👉 বিক্রি করলে কি হবে?

চামড়া বিক্রি করে এর টাকা নিজের প্রয়োজনে খরচ করা জায়েজ নয়। তবে তা বিক্রি করে প্রাপ্ত অর্থ গরিব-দুস্থদের দান করা যেতে পারে।

👉 কাজের বিনিময় দেওয়া যাবে না:

কোন ব্যক্তি কুরবানীর কাজ যেমন জবাই চামড়া ছাড়ানো করলে চামড়া পারিশ্রমিক হিসেবে দেওয়া নিষিদ্ধ।


কুরবানির কাজাঃ


কুরবানীর কাজা সংক্রান্ত হুকুম:

যদি কুরবানী ওয়াজিব হয় এবং সে কুরবানীর দিনগুলোতে তা না করে থাকে তাহলে তার উপর পরবর্তীতে একটি কুরবানী পশুর সমপরিমাণ টাকা সদকা করা ওয়াজিব হবে।

যেমন একটি ছাগল বা ভেড়া কোরবানি না করলে পরবর্তীতে তার মূল্য সদকা করতে হবে।

যদি গরু বা উটের অংশে শরিক হওয়ার নিয়ত ছিল তবে সে অংশের মূল্য সদকা করতে হবে। এই সদগা কেবল ফকির মিসকিনদেরকেই দেওয়া যাবে।

দলিল: ফাতাওয়া শামী







Post a Comment

0 Comments